দলিল তল্লাশি অনলাইনে বাংলাদেশ চেক করুন সহজেই
প্রিয় পাঠক, আমরা সকলেই জানি যে একটি জমির মালিকানার মূল ডকুমেন্টস হচ্ছে তার দলিল। জমির দলিল হারিয়ে গেলে সেই দলিল তল্লাশি করতে হয়। আপনি যদি পুরাতন দলিল তল্লাশি সম্পর্কে অবগত না থেকে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা দলিল তল্লাশি অনলাইনে বাংলাদেশ পুরাতন এবং তল্লাশি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমরা এমন অনেকেই আছি যারা অবহেলার কারণে জমির দলিল হারিয়ে ফেলি। অথবা অনেক অবহেলার কারণে সেই দলিল পরে থেকে নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে চলুন এখন আমরা সকলেই পুরাতন বিভিন্ন দলিল তল্লাশি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ভূমিকা ঃ দলিল তল্লাশি অনলাইনে বাংলাদেশ
দলিল হলো এমন একটি গুরুরত্বপূর্ণ দলিল যার মাধ্যমে আপনি সেই দলিলে উল্লিখিত জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে দাবি করতে পারবেন। আর যদি আপনি সে দলিল হারিয়ে ফেলেন বা নষ্ট করে ফেলেন তাহলে আপনি সেই সংশ্লিষ্ট জমির মালিক হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারবেন না।
আরো পড়ুন: গুগল ম্যাপে লোকেশন বের করার উপায়
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি দলিল কি? দলিল তল্লাশি কি? জমির দলিল সার্চ, পুরাতন দলিল তল্লাশি,দলিল কত প্রকার ও কি কি, পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারি জানতে পারবেন।
দলিল কি?
দলিল হলো কোন কিছুর মালিকানা দাবি করার ক্ষেত্রে সেই সংশ্লিষ্ট জিনিসের ওপর লিখিত চুক্তিনামা। এটি একটি সম্পত্তির মালিকানা দাবি করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস বা নথি। দলিল রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে অনুমদন হয়। দলিল প্রকারভেদের ভেতরে অনেক প্রকারের হয়। যেমন
- বিনিয়ম দলিল
- এওয়াজ বদল দলিল
- দান দলিল
- সাব-কবলা দলিল
- হেবা দলিল
দলিল তল্লাশি কি?
তল্লাশি মানে হলো কোন কিছু খোঁজা-খুঁজি করা। আর দলিল তল্লাশি মানে হলো জমির দলিল বা নিবন্ধনপত্র খোঁজা-খুঁজি করা। এই দলিল যখন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করা সম্পন্ন হয়, তখন সেই অনুমোদন হলে রেজিস্ট্রি অফিসের বালাম নামে যে বহি রয়েছে সেই বহিতে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।
আর এই লিপিবদ্ধ করার সময় দলিলটির যেসকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে সেই সকল তথ্য দিয়ে বইয়ের একটি সূচিপত্র বানানো হয়। যাতে করে পরবর্তিতে সেই তথ্য খুব সহজেই খুজে পাওয়া যায়। এই সূচিতে প্রথমে দাতা/গ্রহিতার নাম, বাবার নাম দিয়ে করা হয়। আর তার জন্য অন্য আরেকটি নতুন সূচি করা হয় জমির মৌজার নাম দিয়ে।
দলিল কত প্রকার ও কি কি
দলিল হলো কোন কিছুর জন্য লিখিত চক্তি পত্র অথবা আইনগত ভাবে বৈধ নথিপত্র। তবে আমাদের বাংলা ভাষায় আমরা সকলেই দলিল বলতে জমির জন্য কিনা অথবা বিক্রি করার ক্ষেত্রে যেই নথি পত্রে স্বাক্ষর করা হয় তাকে বুঝিয়ে থাকি।
জমির দলিলের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। আপনি যদি না জেনে থাকেন দলিল কত প্রকার ও কি কি সেই সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে চলুন এখনই জেনে নেওয়া যাক। জমির দলিলের প্রকারভেদ গুলি হলোঃ
- সাফকবালা দলিল
- দানপত্র দলিল
- হেবা দলিল
- হেবা বিল এওয়াজ
- এওয়াজ দলিল
- বণ্টননামা দলিল
- অছিয়তনামা দলিল
- উইল দলিল
- না-দাবী দলিল
- বয়নামা দলিল
- দখলনামা দলিল
- রায় দলিল
- ডিক্রি দলিল
- আরজি দলিল
- আদালত যোগে সাফকবলা দলিল
- বায়নাপত্র দলিল
- বেনামী দলিল
তথ্যসূত্রঃ Wikipedia
পুরাতন দলিল তল্লাশি
আপনারা এমন অনেকেই আছেন যারা যেকোন ভুলবশত জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারিয়ে ফেলেন বা নষ্ট করে ফেলেন। এমন অবস্থায় আপনি যখন দলিলটি খোজ করতে চান তাহলে আপনাকে সেই দলিলের নাম্বার, বালাম নাম্বার, দলিল পৃষ্ঠা নম্বার অথবা তারিখ দরকার হবে। এমন অবস্থায় আপনার যদি কিছুই মনে না থাকে তাহলে সেটি কিভাবে তল্লাশি করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমে আপনাকে আপনার পুরাতন অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া দলিলের তল্লাশির জন্য আপনার নিকটস্থ রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তল্লাশি দিতে হবে। তার কারণ হলো আপনি যখন দলিলটি রেজিস্ট্রি করেছিলেন তখন সেই দলিলের সকল তথ্য বালাম বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
আর এছাড়াও দলিলটি যেন খুব সহজেই সেখানের হাজার হাজার দলিলের মধ্যে থেকে খুজে পাওয়া যায় সেই জন্য একটি সূচি তৈরি করা হয়। আর এই একটি দলিলের জন্য সাধারণত দুই টি সুচিপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রথম সূচিপত্রে সেই দলিলের যে দাতা/গ্রহিতা রয়েছে তাদের নাম সহ বিভিন্ন তথ্য থাকে।
আর পরবর্তি অপর একটি সূচিপত্রে সেই দলিলের মৌজার নাম উল্লেখ করা থাকে। এখন আপনি যদি আপনার পুরাতন দলিলের তল্লাশি দিতে চান তাহলে আপনি বালাম অথবা সূচিপত্র এই দুইটার মধ্যে থেকে যেকোন একটিতে ভালো করে তল্লাশি করতে হবে। তবে আপনি যদি খুব সহজেই তত্য পেতে চান তাহলে আপনাকে সূচিপত্রে তল্লাশি দেওয়াই উত্তম।
কারণ বালাম বইয়ে তল্লাশি দিলে সেটি অনেক কষ্ট সাপেক্ষ এবং খরচ ও অনেক বেশি। আর আপনি যদি সূচিপত্রে তল্লাশি দেন তাহলে তাহলে এটি তুলনামূলক সহজ এবং এখানে খরচ ও অনেক কম। এক্ষত্রে শুধু আপনি সূচিপত্রে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করলেই আপনি আপনার জমির সূচিপত্র তল্লাশি দিয়ে জমির তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
দলিল তল্লাশি অনলাইনে বাংলাদেশ
অনলাইনে জমির দলিল চেক করা এখন অনেক সহজ একটি বিষয়। যেটা আপনি ঘরে বসে থেকে আপনার হাতের মুঠো ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব সহজেই করে পেলতে পারবেন। জমির দলিল বের করার জন্য অবশ্যই আপনাকে জমির খতিয়ান যাচাই করে নেওয়া উচিত। যেটি আপনি অনেক সহজেই করে ফেলতে পারবেন ঘরে বসে থেকেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের সব ধরণের খতিয়ান এখন তীয় ভুমি তথ্য ও সেবা কাঠামোর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যায় খুব সহজেই। তাহলে চলুন এখন আমরা অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে জমির খতিয়ার যাচাই করবেন সেটা জেনে নাই।
- প্রথমে আপনার ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে https://www.eporcha.gov.bd/khatian-search-panel এই লিংক ওপেন করুন।
- তারপর আপনি এই লিংকে প্রবেশ করলে আপনাকে সেখানে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং সবশেষে মৌজা বাছাই করতে বলবে। সেটি আপনার জমির জরিপ ধরণ অনুযায়ি সেটি বাছাই করে নিবেন।
- এরপর আপনাকে আপনার জমি খতিয়ান যাচাই করার জন্য আপনাকে চারটি অপশান দেওয়া হবে। স্বিখান থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ি অপশান সিলেক্ট করার জন্য বাম পাশের দেওইয়া গোল ঘুরে ক্লিক করুন।
- এর পর আপনি নিচেই আরো একটি বক্স দেখতে পাবেন সেখানে আপনি যদি পূর্বে যেটা সিলেক্ট করেছিলেন সেই অনুযায়ি বক্সটি পুরণ করুন।
- এরপর আপনাকে নিচে দুই টি সংখ্যা দিয়ে বলা হবে যোগ করতে। আপনি সেই সংখ্যা দুটি যোগ করে তার যোগফল নিচের একটি বক্স দেওয়া থাকবে সেখানে লিখে দিন।
- সবশেষে আপনি "খুজুন" নামে আকটি অপশান দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করু । আর পরে আপনি যদি আপনার সকল তহ্য সঠিকভাবে বসিয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার কাঙ্খিত খতিয়ানটি দেখতে পাবেন।
আর এভাবেই আপনি আপনার কাঙ্কিত জমির খতিয়ানটি যাচাই করতে পারবেন।
পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম
আমরা তো প্রায় সকলেই পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু তার আগে আমাদের সকলেরই এই বিষয় জানতে হবে যে, বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন জমির নতুন পুরাতন জমির দলিল বের করার জন্য অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করেনি।
আরো পড়ুনঃ কম দামে ভালো মোবাইল
তবে আপনি জমির দলিল বের করতে না পারলেও আপনি আপনার জমির দলিলের জন্য প্রয়োজনিয় কিছু মৌলিক কিছু তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন আমরা সকলেই মোবাইল দিয়ে পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
- প্রথমে আপনার ফোনের থেকে আপনার পছন্দ মতো একটি ব্রাউজার ওপেন করুন।
- এর পর আপনি সার্চ বারে গিয়ে সার্চ করুন Wb registration লিখে।
- এখন আপনি যে প্রথম ওয়েবসাইট দেখতে পাচ্ছেন সেখানে ক্লিক করে প্রবেশ করুন।
- আপনি ক্লিক করলেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে পুরাতন দলিল বের করার জন্য যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখান।
- উক্ত প্রজে প্রবেশ করার পরে আপনি ডান দিকে একটি অপশান দেখতে পারবেন। যেখানে থেকে E-SERVICES অপশানটি সিলেক্ট করে নিয়ে আপনি সেখান থেকে Searching of Deed নামে যে অপশান রয়েছে সেখানে ক্লিক করুন।
- এখান থেকে আপনি ক্লিক করলেই এখানে অনেকগুলি অপশান দেখতে পারবেন। যেমন By seller/Buyer/Prty Name এই গুলি অপশানে ক্লিক করুন।
- এখানে ক্লিক করার পরে আপনর সামনে একটি আবেদন ফরম আসবে। এখানে আপনার ফাস্ট নাম, লাস্ট নাম, দলিলের সাল, কোন জেলার দলিল এবং সিকিউরিটি কোড দিয়ে আপনাকে এই ফরমটি পূরণ করতে হবে।
- এখানে আপনার সকল তথ্য সঠিক থাকলে আপনি আপনার কাঙ্খিত দলিলটি দেখতে পারবেন। এখানে আপনি আমানার নাম, একই বছর, জেলা যাদের সাথে মিলে গিয়েছে সেই সকল তথ্য দেখতে পারবেন। এইখান থেকে যদি আপনি আরো বিস্তারিত জানতে তাহলে আপনি সেখানের View অপশানে ক্লিক করুন।
দলিল তল্লাশি সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ দলিল তল্লাশি করতে কত টাকা লাগে?
উত্তরঃ দলিল তল্লাশি করতে ১বছরের জন্য ২০ টাকা এবং অতিরিক্ত প্রতি বছরের জন্য ১৫ টাকা করে লাগে।
প্রশ্নঃ পুরাতন দলিল কোথায় রাখা হয়
উত্তরঃ পুরাতন দলিল আর্কাইভস এ রাখা হয়?
প্রশ্নঃ জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত 2023?
উত্তরঃ রেজিস্ট্রি ফি জমি মূল্যের ১%, স্ট্যাম্প শুল্ক ফি জমির মূলের ১.৫%, স্থানীয় সরকার ফি জমির মূলের ৩%, উৎস কর ফি জমি মূল্যের ১%,
প্রশ্নঃ জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায়?
উত্তরঃ জমি রেজিস্ট্রি করার ৬ থেকে ৭বছর সময় লাগে দলিল পাওয়ার জন্য।
শেষ কথা
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলর মূল আলোচনার বিষয় ছিলো পুরাতন দলিল তল্লাশি সম্পর্কে। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুজতে পারছেন। এ রকম তথ্যবহুল আর্টিকেল প্রতিদিন নিয়োমিত পড়ার জন্য আমাদের ওয়াবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করুন।
আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url