মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ করতে চান। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও আপনি সেই সম্পর্কে তথ্য খুজে পাচ্ছেন না। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে আমরা মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাবার তালিকা এবং তেলাপিয়ার চাষ ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাবার তালিকা
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি মনোসেক্স তেলাপিয়ার বৈশিষ্ট্য, তেলাপিয়া মাছ চাষের পুকুর নির্বাচন, তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি, পোনা মজুদ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, তেলাপিয়ার রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভূমিকা

মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ খুব সহজেই লাভজনিক উপায়ে চাষ করা যায়। মাছ চাষের ক্ষত্রে তেলাপিয়া মাছ অনেক লাভজনক একটি মাছের প্রজাতি। এই মাছের চাহিদা বর্তমানে বাজারে অনেক ভালো। তাই মৎস কর্মকর্তারা সকল মাছ চাষীদেরকে এই মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ চাষ করতে বলেন।

তেলাপিয়া মাছ মূলত একটি থাইল্যান্ড এর চাষকৃত মাছ। এই মাছ ১৯৭৪ সালের দিকে বাংলাদেশে প্রথম নিয়ে আসা হয়। আই মাছ খুব একটা বড় না হলেও অতি দ্রুত প্রজনন দিতে সক্ষম। তাই খুব দ্রুত পুকুরে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যার ফলে সকল মৎস চাষীদের এই জাতের মাছে অনেক জনপ্রীয়।

মনোসেক্স তেলাপিয়ার বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের আবহাওয়া মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য অনেক উপযোগী। এই মাছ স্বপ্ল গভীর জলাসয়ের পানিতেও চাষ করা যায়। প্রতি একর জমিতে এই মাছ চাষ করে ৬ মাসে প্রায় ২লাক্ষ টাকার মতো মুনাফা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি হলোঃ
  • এই জাতের মাছ অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যার ফলে অধিক ফলনশীল।
  • সাধারণ ৩-৪ মাস চাষের মাধ্যমেই এই মাছ বাজারে বিক্রি করা যায়।
  • এই মাছের ওজন ৪-৫ মাস বয়সে ৫০০ - ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • এই জাতের মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক।
  • এই জাতের মাছ স্ত্রী তেলাপিয়া মাছের থেকে পুরুষ তেলাপিয়া মাছ প্রায় ৩০ ভাগ বেশি।
  • এই মাছ প্যার সকল ধরণের জলাশয়ে চাষ করা যায়।
  • এই জাতের মাছের কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি হলোঃ এদের পাখনা কিছুটা লালচে দেখতে লাগে, এদের আকার অনেকটা গোল আকৃতির হয় এবং এদের পুরুত্ব অনেক বেশি থাকে।
  • এই জাতের মাছ চাষের ব্যাবস্থাপনা অনেক সহজ এবং অপরদিকে এতে লাভের পরিমাণ ও অনেক বেশি থাকে।

তেলাপিয়া মাছ চাষের পুকুর নির্বাচন

প্রায় সকল জাতের মাছ চাষ করার জন্য পূর্ব শর্ত হলো চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করা। তেমনি এই মাছ চাষের জন্য ও মাছ চাষ করার পূর্বে পুকুর নির্বাচন করতে হয়। আপনি যদি এই জাতের মাছ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই জাতের মাছের জন্য পুকুর নির্বাচন করবেন কিভাবে সেটা জানতে হবে। চলুন তাহলে এখন আমরা জেনে নেই সেই সম্পর্কে।

এই মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে যে পুকুরে কাদার পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। তার তার পাশা পাশি এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেই পুকুরে/জলাশয়ে কমপক্ষে ৪ - ৬ মাস পানি থাকে।

তবে আপনি যদি নার্সারির জন্য পুকুর নির্বাচন করতে চান তাহলে তাহলে সেই পুকুরের আয়তন হতে হবে ১৫ - ২০ শতাংশ। আর লালন পুকুরের জন্য কম পক্ষে ২০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ হতে হবে। তাবে আপনি চাইলে এর থেকে বড় পুকুর ও নির্বাচন করতে পারেন। সেইটা আপনার মাছের পোনার ওপর প্রভাব ফেলবে।

তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন করার পরেই এর পরবর্তি ধাপ হলো মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি করা। মাছ চাষের ক্ষত্রে লাভবান হওয়ার জন্য এটি ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ একটি। তাই আপনার পুকুর নিররাচন করার পরে আপনার সেই পুকুরে মাছের পোনা ছারার পূর্বে সেই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে। এখন চলুন পুকুর প্রস্তুত কিভাবে করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
  • পুকুর প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো প্রথমে পুকুরটির সম্পূর্ণ পানি সেচে রোদে শুকাতে হবে। যাতে করে রাক্ষুসে মাছ এবং মাংসাশী প্রাণী খুব সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়।
  • পুকুরের তলানিতে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কাদা থাকে তাহলে তা উঠিয়ে ফেলে দিতে হবে।
  • পুকুরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে। পুকুর পাড়ে যদি বড় কোন গাছ থাকে তাহলে তার ডালপালা ছেটে ফেলে দিতে হবে।
  • পুকুরের পাড় যদি ফাটা থাকে অথবা ভাঙা থাকে তাহলে তা মেরামত করে নিতে হবে।
  • পুকুরের পানিকে চাষের উপযোগি করার জন্য চুন প্রয়োগ করতে হবে। ( প্রতি শতাংশের জন্য ১ কেজি হারে )
  • পকুরের চুন প্রয়োগের পর ২ - ৩ দিন পরে পুকুরে পানির ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • পুকুরে সার প্রয়োগের পর ২ - ৩ দিনের মধ্যে পকুরে মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ চাষ করতে হবে।

মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাবার তালিকা

পুকুরে পোনার পর্যাপ্ত বৃদ্ধি করার মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের খাবার তালিকা জানা অনেক জরুরি একটি বিষয়। কারণ খাদ্যের মাধ্যমেই মাছের পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। পুকুর প্রস্তুতির পরেই সেখানে মাছে পোনা ছাড়তে হবে। তার জন্য আপনাকে প্রতি শতাংশের জন্য ১৫-২০ গ্রাম ওজনে প্রতিটি সুস্থ সুবল পোনা সংগ্রহ করতে হবে।

আর প্রতি শতাংশের জন্য আপনাকে ২০০ - ২৫০ টি পোনা ছাড়তে হবে। পোনা পুকুরের পানিতে ছাড়ার পরেই প্রতিদিন আপনাকে তাদের খাদ্য হিসেবে প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক খাবের ২৫%-৩০% হারে দিতে হবে। অথবা আপনি এটি প্রতিটি মাছে ওজনের ৩% - ১০% হারে প্রয়োগ করতে পারেন।

নিম্নে পোনা মাছের খাদ্য ব্যাবস্থাপনার একটি চার্ট দেওয়া হলো। এইখান থেকে আপনি খুব সহজেই মাছের জন্য আমিষ খাদ্য নার্সারী ষ্ট্যাটার্ড কত দিতে হবে এবং বাড়ন্ত মাছের খাদ্য কত % হারে দিতে হবে এবং খাদ্যের উপাদানগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন তাহলে এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

তেলাপিয়ার রোগ ও প্রতিকার

এই জাতের তেলাপিয়া মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক। তবে তার পরেও এই মাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন কারণে। যেমনঃ পকুরে মাছ অধিক পরিমাণে মজুদ, পুকুরে খাদ্য বেশি প্রয়োগের ফলে উচ্ছিষ্টাংশ খাবার এবং অন্যান্য নানান দ্রব্য পচনের ফলে পুকুরের পানি দুষিত হয়ে এই মাছের কিছুটা রোগ ঝুঁকি বেরে যায়।

তেলাপিয়া মাছের প্রধান রোগ হলো প্রটোজোয়ান প্যারাসাইট। আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার পুকুরের মাছ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে পুকুরের প্রতি শতাংশের জন্য ২০০ - ২৫০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে আপনি যদি দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে আক্রান্ত মাছ শনাক্ত করে সেই মাছকে ১,০০০ লিটার পানিতে ২৫-৩০ মিলিলিটার ফর্মালিন মিশিয়ে ৫-১০ মিনিট গোসল করাতে হবে।

তেলাপিয়া মাছ এছাড়াও আরো কিছু রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যেমনঃ ষ্ট্রেপটোকক্কাস এবং এরোমোনাট সেপটিসেমিয়া। এই সকল রোগে আক্রান্ত হলে আপনি আপনার প্রতিদিনের প্রয়োগকৃত খাবারে সাথে প্রতি কেজি খাবারে ১-২ গ্রাম এরিথ্রোমাইসিন বা অক্সিটেট্রাসাইকিলিন মিশিয়ে ৫ - ৭ দিন খাওয়ান।

মাছ আহরণ ও উৎপাদন

মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ আপনি যদি ৩ - ৪ মাস সঠিকভাবে লালন পালন করেন তাহলে প্রতিটি মাছে গড় ওজন হবে প্রায় ২০০ - ২৫০ গ্রাম। এই মাছকে যদি সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ি চাষ করা হয় তাহলে প্রতি ৩ - ৪ মাসে প্রতি একর জমিতে ৫-৬ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। পুকুরের পানি সেচে কমিয়ে অথবা জাল টেনে পুকুরের মাছ সংগ্রহ করতে হবে।

উপসংহার

আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছের চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। এই রকম তথ্যবহুল আর্টিকেল প্রতিদিন ফ্রীতে নিয়োমিত পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আর হ্যা আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url