কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার ও ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা জানুন
বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রিয় পাঠক আপনার নিশ্চয়ই কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা ও ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে এসেছেন। আপনাদের কারো যদি কিডনি সমস্যা এবং ডায়ালাইসিস করে থাকেন তাহলে আপনি ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা পোস্টটি পড়তে পারেন। তাই আপনি যদি কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই পোস্টটি পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃআপনারা যারা কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানেন না তারা আজকের এই পোস্টটি পড়লে সম্পন্ন বিষয়ে ধারণা পাবেন।
ভূমিকা
আপনারা যারা কিডনি রোগী তাদের জন্য অবশ্যই কিডনি রোগীর খাবার তালিকা ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান রাখতে হবে। এছাড়াও যাদের কিডনি বিকল হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হয় তাদের অবশ্যই পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে অর্থাৎ তাদের ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকাগুলো অবশ্যই জানতে হবে এবং খেতে হবে।
এই খাবারগুলো অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে কারণ ডায়ালাইসিস রোগীকে খাবারের দিক দিয়ে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আর কিডনি রোগের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম মেনে চলতে হবে। আপনার কিডনির জন্য কোনটি ক্ষতিকর খাবার সেটা জানতে হবে তা না হলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। আর এজন্যই আমরা আজকের পোস্টটিতে কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই জানতে বিস্তারিত পড়ুন।
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
সাধারণত কিডনি বিকেল হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস করা হয়। ডায়ালাইসিস করার পর রোগীদের নিয়ম মেনে খাবার খেতে হয়। নিয়ম না মানলে ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে। ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য। ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা জানতে এই অংশটি পড়তে থাকুন।
- খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আপনার উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য রাখা উচিত।
- তবে খাদ্য তালিকায় কম পরিমাণে থাকা সোডিয়াম ও পটাসিয়াম এবং উচ্চ মাত্রার ফসফরাস রয়েছে এমন খাবার বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
- যে সব ফল খাওয়া যাবেঃ (প্রতিদিন যে কোনো এক প্রকারের ফল খেতে পারেন ৫০ – ১০০ গ্রাম ) পেয়ারা ১/২, আপেল ১/২, নাসপাতি ১/২, পাকা পেপে ২-৪ টুকরা, কমলা ১/২, আনারস ২-৪ টুকরা, বেল।
- চর্বিহীন মাংস (চর্মবিহীন মুরগি, মাছ, গরুর মাংস) খাওয়া যাবে।
- ডাক্তার যদি পরামর্শ দেয় তাহলে আপনারা ডিম খেতে পারেন তবে ভেতরকার কুসুম ছাড়া খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
- চামড়াবিহীন টার্কি বা মুরগি খেতে পারেন। রান্না করার আগে অবশ্যই চামড়া ছাড়িয়ে নিবেন।
- সবজি হিসাবে আপনারা বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,বেল মরিচ ,সবুজ মটরশুটি ,পেঁয়াজ ,মূলা ইত্যাদি সব যেগুলো খেতে পারেন।
- এছাড়া আপনারা খাবার হিসেবে ভেষজ চা খেতে পারেন। যা ডায়ালাইসিস করার পর খাওয়া যায়।
- মুরগির মাংস, মুরগির ডিম(কুসুম বাদে) ও গরুর দুধ ডায়ালাইসিস রোগীর জন্য উপকারী খাবার। তাই ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য তালিকায় এগুলো সাথে ডাল ও রাখতে পারেন।
- ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য তালিকায় মাছ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কিডনি রোগীদের জন্য মাছ খুবই উপকারী খাবার।
- নিয়মিত পরিমাণগতভাবে পানি পান করতে হবে। পানি পান করা ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ভালো। কিডনি পরিষ্কার থাকবে।
আমি এখানে ডায়ালাইসিস রোগীদের খাবার তালিকার ধারণা দিয়েছি মাত্র। আপনারা পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকার চাট নিয়ে নিবেন যেখানে আরো বিস্তারিত দেওয়া থাকবে। যেগুলো খেয়ে আপনি সুস্থ সবল রাখতে পারবেন।
ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার
ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার কিছু ক্ষতিকর খাবার রয়েছে যা আপনাদের এড়িয়ে চলা উচিত। সুস্থ থাকতে হলে এই খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই আপনাদের ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
- উচ্চ-ফসফরাস খাবার (দুগ্ধ, বাদাম, চকোলেট) খাবারগুলো খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের ফসফরাস যা ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- উচ্চ পটাসিয়াম ফল এবং সবজি (কলা, কমলালেবু, আলু, টমেটো) খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- চিনি যুক্ত পানীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এই খাবার গুলোর কারণে ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে যা ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা
এখন আমরা কিডনি রোগীর খাবার তালিকা বা খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে পারবো। আপনারা যারা কিডনি নিয়ে চিন্তিত আছেন তাদের আজকের এই পোস্টটি কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা পড়ে নেয়া উচিত। চলুন জেনে নেই কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা।
- সবুজ ফল ও সবজি। আপনার যদি কিডনি রোগ থাকে তবে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত সবুজ ফল ও শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ধরনের ফল খেতে পারেন। এবং প্রতিদিন কিডনি রোগীদের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
- কিডনি রোগীদের আমিষের উৎস হিসেবে মাছ খেতে পারেন। কিডনি রোগীদের জন্য মাছ চমৎকার কার্যকরী খাদ্য।
- ডাক্তার যদি পরামর্শ দেয় তাহলে আপনারা ডিম খেতে পারেন তবে ভেতরকার কুসুম ছাড়া খেতে হবে।
- অলিভ অয়েলে রান্না করে খান। জলপাই তেল দিয়ে তৈরি খাবারগুলি কিডনি রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- সুষম খাবার গ্রহণ করা হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কিডনিকে ভালো রাখে।স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, সোডিয়াম এবং যুক্ত শর্করা খাবার না খাওয়াই ভালো।
- কিডনি রোগীরা অধিক পরিমাণ পানি পান করবেন যাতে করে কিডনি সচল থাকে এবং রক্ত চলাচল ভালোভাবে হয়।
- কলাতে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর কিডনি রোগ। কলা খাওয়া এটা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- কমলাতে রয়েছে ভিটামিন সি এছাড়া আরো রয়েছে পেকটিন নামক আশ যা আমাদের দেহে কোলেস্টেরল মাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
তাহলে আপনারা জানতে পারলেন কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে। আমি এখানে শুধুমাত্র অল্প কিছু কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা প্রকাশ করেছে। আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার
ইতিমধ্যে আপনারা কিডনির জন্য ভালো খাবার গুলো সম্পর্কে জেনেছেন এখন আপনারা কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার বিষয়ে জানতে পারবেন। কিডনি রোগীদের ভালো খাবার পাশাপাশি ক্ষতিকর খাবার রয়েছে যা আমাদের জেনে নেওয়া উচিত। আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাকঃ
- কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার হল চিংড়ি মাছ। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল যা আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
- স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে ফাস্ট ফুড খাওয়া ব্যক্তিদের কিডনি রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে। আর যারা অধিক পরিমাণে ফাস্ট গ্রহণ গ্রহণ করে থাকেন তাদের কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- ডিমের কুসুম খাওয়া কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার। কারণ ডিমের কুসুমে রয়েছে অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই কিডনি রোগীরা ডিমের সাদা অংশ খেতে পারলেও ডিমের কুসুম খাওয়া ক্ষতিকর।
- কিডনি রোগীরা নারিকেল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। নারিকেল খেলে কিডনি রোগীদের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এটি একটি ক্ষতিকর খাবার কিডনি রোগীদের জন্য।
- সাধারণত ভাজাপোড়া খাওয়া এমনিতেই সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আর তবে যদি কিডনি রোগীরা এই খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে তাদের জন্য আরো মারাত্মক ক্ষতিকর খাবার এই ভাজাপোড়া।
কিডনির জন্য উপকারী সবজি
কিডনির জন্য উপকারী সবজি গুলো সম্পর্কে আপনারা এখন জানতে পারবেন। অনেকে আছেন যারা জানেন না কিডনির জন্য উপকারী সহজে কোনগুলো।যখন কিডনির স্বাস্থ্যের কথা আসে, তখন পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়াম কম থাকে এমন সবজিগুলিতে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যে সবজিগুলো খেলে কিডনি রোগীরা সুস্থ থাকবেন তা জেনে নেই।
- বাঁধাকপিঃপটাসিয়াম কম এবং ফাইবার এবং ভিটামিন কে এর একটি ভাল উৎস।
- ফুলকপিঃ পটাসিয়াম কম ও উচ্চ-পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খাবেন।
- বেল মরিচঃ ভিটামিন এ এবং সি এর একটি ভাল উৎস প্রদান করে।
- সবুজ মটরশুটিঃ পটাসিয়াম তুলনামূলকভাবে কম এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস।
- শসাঃ পটাসিয়াম খুব কম এবং হাইড্রেশন প্রদান করে।
- রসুনঃ খাবারে স্বাদ যোগ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মূলাঃ এটি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
- লেটুস (আইসবার্গ বা রোমাইন)ঃ হাইড্রেশনের একটি ভাল উৎস।
- গাজরঃ ভিটামিন এ বেশি থাকে।
- আলুঃ আলুতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি ভিটামিন বি, পটাশিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা কিডনির জন্য উপকারী সবজি।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন(FAQs)
কিডনি রোগী কি দুধ খেতে পারবে?
উত্তরঃ কিডনি রোগীরা দুধ খেতে পারেন।
কিডনি রোগী কি কি সবজি খেতে পারবে?
উত্তরঃসবজি হিসাবে আপনারা বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,বেল মরিচ ,সবুজ মটরশুটি ,পেঁয়াজ ,মূলা ইত্যাদি সবগুলো খেতে পারেন।
কিডনি রোগী কি পাকা আম খেতে পারবে?
উত্তরঃ যদিও কিছু অন্যান্য ফলের তুলনায় পাকা আমে পটাসিয়াম কম থাকে, তবুও কিডনি রোগীদের পরিমিত পরিমাণে খওয়া উচিত।
কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, কিডনি রোগীরা খেজুর খেতে পারবেন।
কিডনি রোগী কি তরমুজ খেতে পারবে?
উত্তরঃ এটি একটি হাইড্রেটিং ফল এবং সাধারণত কিডনি রোগযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
শেষ কথা
আশা করসি আপনারা ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা বা কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে পারলেন।আপনারা অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা গ্রহণ করবেন। আপনাদের কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর হয়তো আপনারা পেয়ে গেছেন। আজকের পোস্টে আপনারা কিডনির জন্য উপকারী সবজি ,কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার ,ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর খাবার সহ অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
যা আপনারা জানলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। এ ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url