ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তালিকা ও ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়

আমাদের শরীরের পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন হয়। তবে আপনার যদি ভিটামিন ডি এর অভাব হয় তাহলে কি কি রোগ হতে পারে তা আমরা আলোচনা করব। আজকের পাঠের আলোচ্য বিষয় হলো ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয় - ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তালিকা । আপনি যদি ভিটামিন ডি সম্পর্কিত সকল কিছু জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয় - ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার তালিকা
আপনারা কি জানেন ভিটামিন ডি এর অভাবে কি রোগ হয় যদি না জেনে থাকেন আমরা আজকের আর্টিকেলটিতে তা জানানোর চেষ্টা করেছি।

ভূমিকা

আমাদের শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে অনেক ধরনের উপকার করে থাকে এবং সাথে সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। তবে এই ভিটামিন ডি যদি আপনার শরীরে অভাব হয়ে থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে যা আমার একটু পরে জানতে পারব। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন ডি এর অভাবে কি কি রোগ হয়ে থাকে।

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি রোগ হয় 

আমরা সকলে জানি ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড় গঠনের সাহায্য করে। তবে এই ভিটামিন এর অভাবে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে চলুন জেনে নেই।
  • ভিটামিন ডি এর অভাবে অস্টিওপোরোসিস এবং রিকেটের রোগের মত হাড়ের সমস্যা হতে পারে।
  • এর অভাবে হলে সর্বপ্রথম যে সমস্যা হবে সেটি হল আপনার ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভব করা।
  • এছাড়া এর অভাবে কোমরে বাঁ পায়ে হাড়ের ব্যথা হতে পারে।
  • ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে বার বার সর্দি বা কাশি হতে পারে।
  • ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে ঘাটতি থাকলে শরীরের হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায়।
  • বিশেষ করে ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ দেখা দেয়।
  • বিভিন্ন ধরনের রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধতে পারে।
  • শরীরের মাংসপেশি এ দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় এই ভিটামিনের অভাবে।
  • শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেলে মানসিক উত্তেজনা অর্থাৎ মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
  • এছাড়া ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়।

ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের কি রোগ হয়

আপনারা জানেন ভিটামিন ডি আর শরীরের হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেমনি শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের বিকাশ বৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এছাড়া শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ভিটামিন ডি এর অভাবে রিকেটস রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া শিশুদের পা বেঁকে যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মাথার খুলি বড় হয়ে যায় এমনটা দেখা গেছে। বাচ্চাদের অর্থাৎ শিশুরা দীর্ঘদিন ভিটামিন ডি এর অভাব এ ভুগলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে বাচ্চাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যবহার হতে পারে।

এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দেয়। বাচ্চাদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে মাংসপেশি ক্রাম্প দেখা দিয়ে থাকে। অনেক সময় শিশুর বিরক্তবোধ করে এটি সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়। ভিটামিন ডি আমাদের মেজাজ ঠিক রাখতে ভালো কাজ করে। এছাড়া বাচ্চাদের এই ভিটামিনের অভাবে শারীরিক বৃদ্ধি কমে যেতে পারে শিশুরা কম বয়সে দ্রুত বিধি পেয়ে থাকে।
আর যদি ভিটামিন ঘাটতি থাকে তাহলে তো বৃদ্ধি বিকাশ কমে যায়। শিশুরা ভিটামিন ডি না পেলে তাদের দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার অনেক সময় এই ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাই আপনাদের শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে অবশ্যই সকল ধরনের ভিটামিন সহ ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করবেন।

ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়

আপনারা তো এতক্ষণ পর্যন্ত ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয় তা জানতে পারলেন তবে এই ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয় তা আপনাদের জানা উচিত। আপনি যদি প্রয়োজনের থেকে ভিটামিন ডি বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা পড়তে পারেন। বিশেষ করে ভিটামিন বেশি খেলে হাইপারক্যালসিমিয়া রোগ দেখা দিতে পারে। এই রোগী মূলত শরীরের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি হতে পারে। 

তাই অবশ্যই সাবধান থাকবেন অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার দরকার নেই। যেসব খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে তা কম পরিমাণ অর্থাৎ পরিমিতভাবে খাবেন। তাছাড়া আরো ক্ষতি রয়েছে। ভিটামিন ডি মাত্রা অতিরিক্ত খেলে পেটে ব্যথা, ঘন ঘন পিপাসা লাগা, ক্লান্তি ভাব এবং বমি হতে পারে। বেশি পরিমাণ খেলে আপনার কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে।

কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে

স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজনীয়। যদি আপনি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন। তবুও কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে কোন খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে তা জানা দরকার। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক।

স্যামন মাছ

আমরা সকলেই বাঙালি হিসেবে মাছ খেতে পছন্দ করি। তবে এই মাছ থেকেই আমরা ভিটামিন ডি পেতে পারি। আপনারা সকলেই জানেন এই স্যামন মাছ সকল ধরনের পুষ্টিতে ভরা। এই মাছটি খেলে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হবে। এছাড়াও এই মাছটিতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও যা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

কেল

এটা এক ধরনের বিদেশি সবজি। যা আপনারা বড় ধরনের শপিংমলে অর্থাৎ সুপার সপে পাবেন। এই সবজিতে রয়েছে ভিটামিন বি ও ডি। যা আমাদের ভিটামিন বি ও ডি এর উভয়ের ঘাটতি পূরণ করে এবং আমরা উভয় ভিটামিনটি এই সবজি থেকে পেতে পারি।

কমলা

আপনারা সকলে জানেন কমলাতে ভিটামিন সি রয়েছে, তবে এতে ভিটামিন সি এর সঙ্গে ভিটামিন ডিও 
রয়েছে। এই ফল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে ভালো করে তোলে। আপনাদের নিয়মিত খাবারের সঙ্গে এই ফলটি যোগ করতে পারেন। তাহলে আশা করি ভিটামিন ডি পেয়ে যাবেন।

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার

আজকাল আমরা সকলে বাদাম জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে থাকি। এই বাদাম জাতীয় খাবারে ভিটামিন ডি এর উৎস অন্যতম। আপনার এই খাবার থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন তাই নিয়মিত খাবারের সঙ্গে বাদাম জাতীয় খাবার রাখতে পারেন।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

  • ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আপনারা ডিম খেতে পারেন। এই খাবারের ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
  • এছাড়া ভিটামিন ডি এর জন্য দুধ খেতে পারেন যাতে মূলত ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম রয়েছে যা বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সবচেয়ে ভালো ভিটামিন ডি এর উৎস হলো দই। আপনার নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি দই ও খেতে পারেন।
  • এছাড়া মাশরুম খেতে পারেন যা মূলত ভিটামিন ডি তৈরি করে। মাশরুমকে অতিবেগুনি রশ্মিতে নিয়ে গেলে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।
  • চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন ডি এর অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। যেমনঃ স্যামন, ম্যাকেরেল এবং টুনা ইত্যাদি মাছ গুলো খেতে পারেন।
  • খাবারে ডিমের কুসুম যোগ করা আপনার ভিটামিন ডি গ্রহণে অবদান রাখতে পারে। তাই আপনারা অবশ্যই ডিমের কুসুম খেতে পারেন।
  • কড লিভার অয়েল হল ভিটামিন ডি-এর একটি শক্তিশালী উৎস। আপনারা খাদ্য তালিকা পছন্দ না করলে এই তেল রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন।

ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয়

ভিটামিন ডি এর অভাব হলে আপনার সর্বপ্রথম করনীয় হলো নিয়মিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। যা আমার উপরে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেছি। এছাড়া যদি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি শরীরে হয়ে থাকে তাহলে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেতে পারেন। আর অবশ্যই ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। এছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে আপনারা ডিম , মাশরুম , টুনা মাছ , কমলা , পনির , দই , দুধ এবং চর্বিযুক্ত মাছ খাবার গ্রহণ করবেন।
কারন এই খাবারগুলোতে বিশেষ করে ভিটামিন ডি রয়েছে। যা আপনাদের ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করবে। আর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা। আপনি প্রতিদিন ভোর সকালে যখন দেখবেন রোদ হালকাভাবে পড়ছে তখন এই রোদে প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে দাঁড়িয়ে থাকবেন অর্থাৎ মূল কথা আপনি সূর্যের আলো নিচে অবস্থান করবেন। তবে মনে রাখবেন এটি মূলত সকালের দিকে হলে ভালো হয়।

ভিটামিন ডি সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা(FAQ)

প্রশ্নঃভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলো কি কি?
উত্তরঃ ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলঃ টুনা ফিস , সয়াবিন , মাশরুম , সূর্যমুখী ফুলের বীজ ইত্যাদি।

প্রশ্নঃভিটামিন ডি কখন খেতে হয়?
উত্তরঃ চিকিৎসকদের মতে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল সকালে খেতে হয়। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার বা ভিটামিন ডি ক্যাপসুল থেকে ভালো উপকার পাওয়ার জন্য আপনারা সকালে খেতে পারেন।

প্রশ্নঃভিটামিন ডি এর সবচেয়ে ভালো উৎস কি?
উত্তরঃ ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে ভালো উৎস হলোঃ স্যামন মাছ, ডিম , কমলা , বাদাম ও বীজ।

প্রশ্নঃসবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার কোনটি?
উত্তরঃ সাধারণত চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিমের কুসুমে, গরুর মাংসে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃশাকসবজিতে কি ভিটামিন ডি থাকে?
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই। শাকসবজিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে খুব কম পরিমাণে ভিটামিন ডি শাকসবজিতে পাওয়া যায়। সাধারণত পালং শাকে ভিটামিন ডি অল্প পরিমাণে পাওয়া যেতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা ভিটামিন ডি খেলে কি হয় এবং ভিটামিন ডি সম্পর্কিত সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। তবে এই ভিটামিন ডি অভাব হলে কি হয় তা আপনারা হয়তো ভালোভাবেই জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করুন। এবং এ ধরনের তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url